নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া ::
কক্সবাজারের চকরিয়ায় গত কয়েক দিনের লাগাতার ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে মাতামুহুরী নদীতে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি সমতল এলাকা থেকে নেমে যেতে শুরু করছে। সেইসাথে ভেসে উঠছে ক্ষতচিহ্ন। প্রথমদফার বন্যার তান্ডবে লন্ডভন্ড হয়ে যায় উপজেলার ১৮ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার গ্রামীণ অবকাঠামো। এতে দরজায় কড়া নাড়া ঈদের আনন্দ একেবারে মাটি হয়ে গেছে। বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণাধীন অভ্যন্তরীণ সড়কগুলো। বর্তমানে বলতে গেলে এসব সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচল কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। তবে স্থানীয় লোকজনের যাতায়াতের সুবিধার্থে ছোট–খাটো ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো মেরামত করতে দেখা যায় মাটি, বালি ও ইটের টুকরো ফেলে। কিন্তু যেসব সড়কে বড় ধরণের গভীর খাদ এবং গর্তের সৃষ্টি হয়েছে সেসব সড়কের অবস্থা একেবারেই করুণ।
গতকাল সরজমিন পৌরসভা ও বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, প্রপার কাকারা থেকে মেনিবাজার পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা জহিরুল ইসলাম ছিদ্দিকী সড়ক, ছিকলঘাট–কৈয়ারবিল সড়ক, চিরিঙ্গা–বরইতলী–মগনামা সড়ক, চিরিঙ্গা–জনতা মার্কেট–বেতুয়াবাজার সড়ক, পৌরসভার আবদুল বারী পাড়া সড়কের অবস্থা বেশি করুণ। গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের পানির ধাক্কায় একেবারে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় এসব সড়ক। কাকারা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শওকত ওসমান জানান, প্রথম বন্যার ধাক্কাতে লণ্ডভণ্ড হয়ে যাওয়া মুক্তিযোদ্ধা জহিরুল ইসলাম ছিদ্দিকী সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। চকরিয়া–পেকুয়া উন্নয়ন ফোরামের চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান চৌধুরী মানিক বলেন, ‘কৈয়ারবিল ইউনিয়নটি মাতামুহুরী নদীর তলদেশের সঙ্গে সমান্তরাল। তাই বন্যার প্রথম ধাক্কার পানি পুরো কৈয়ারবিলকে আঘাত করে। এতে প্রতিবছর সড়কগুলো বড় বড় গভীর খাদে পরিণত হয়। তাই মাতামুহুরী নদীর চলমান ড্রেজিং প্রকল্পের আওতায় নদীর দুইতীর সিসি বহ্মক দ্বারা টেকসইভাবে সংরক্ষণ না করলে এই অবস্থা থেকে মুক্তি মিলবে না। একই অবস্থার কথা জানালেন বরইতলী, লক্ষ্যারচর, হারবাং, ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নসহ ক্ষতিগ্রস্ত ইউনিয়নগুলোর জনপ্রতিনিধিরা।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) চকরিয়া উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয় সূত্র জানায়, চলতি বর্ষা মৌসুমের প্রথম বন্যায় এলজিইডি নিয়ন্ত্রণাধীন চকরিয়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ১৬টি অভ্যন্তরীণ সড়ক তিগ্রস্ত হয়েছে। তন্মধ্যে কয়েকটি সড়ক একেবারে লণ্ডভণ্ড হয়ে যাওয়া চলাচল অনুপযোগী অবস্থায় রয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরিত হিসেব অনুযায়ী উপজেলায় এলজিইডির নিয়ন্ত্রণাধীণ এসব সড়কের প্রায় ৫১ কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। টাকার অংকে প্রায় ২২ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
এ ব্যাপারে এলজিইডি চকরিয়া উপজেলা প্রকৌশলী রণি সাহা চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘এখনো পুরোপুরিভাবে বন্যাকবলিত এলাকা থেকে পানি নেমে যায়নি। একদিকে নামছে আবার ভাটির দিকের ইউনিয়নগুলোতে প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। তাই সমতল ইউনিয়নগুলোতে ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো যাতে অতিদ্রুত চলাচল উপযোগী করা যায় সেজন্য ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে ক্ষয়ক্ষতির চিত্র প্রেরণ করা হয়েছে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূরুদ্দীন মুহাম্মদ শিবলী নোমান চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলার অভ্যন্তরীণ সড়ক তথা গ্রামীণ অবকাঠামো যাতে অতিদ্রুত চলাচল উপযোগী করা যায় সেজন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছি।
চকরিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাফর আলম চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘দুই বছর আগে সংঘটিত কয়েকদফা ভয়াবহ বন্যায় লণ্ডভণ্ড হয়ে যাওয়া অভ্যন্তরীণ সড়কগুলো যথাযথভাবে নির্মাণকাজ সম্পন্ন করায় মানুষ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছিল। কিন্তু এবারের বন্যার প্রথম ধাক্কায় সেই সড়কগুলো ফের লণ্ডভণ্ড হয়ে যাওয়ায় মানুষের দুর্ভোগ বাড়বে। তবে ঈদের পর পরই ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো চলাচল উপযোগী করতে যথাসাধ্য চেষ্টা থাকবে। প্রয়োজনে মন্ত্রণালয় এবং মন্ত্রী পর্যন্ত তদবির করব।’
পাঠকের মতামত: